বাংলাদেশের উত্তর সীমান্তে গারো পাহাড়ের পাদদেশে অরণ্য বেষ্টিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ভরপুর এক পুরাতন জনপদের নাম শ্রীবরদী। শ্রীবরদী উপজেলাটি ১৯৮৩ সালে শেরপুর জেলার একটি উপজেলা হিসাবে উন্নিত হয়। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের কূলঘেষে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে নীলাভূমি উপজেলাটি ১০ টি ইউনিয়ন ৮১ টি মৌজা, ১টি পৌরসভা ও ১৫৬ টি গ্রাম নিয়ে গঠিত। উপজেলার উত্তরে গারো পাহাড় পরিবেশিষ্ট পাহাড়ি এ উপজেলার আয়তন ২৫২৪৪ বর্গ কিলোমিটার। কৃষি প্রধান এ উপজেলায় মুসলিম, হিন্দু, গারো, কোচ, হাজংসহ অন্যান্য নৃ-গোষ্ঠি সম্প্রদায়ের ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সহঅবস্থানে সমাজ ব্যবস্থা বিদ্যামান।
শ্রীবরদী উপজেলাটির প্রাচীন নাম শম্ভুগঞ্জ। শ্রী শম্ভুনাথ তালুকদার অত্র এলাকার জমিদারের পক্ষে খাজনা সংগ্রহ করতেন। অনেকের মতে তার নামানুসারে এলাকাটির নাম শম্ভুগঞ্জ রাখা হয়েছিল। কথিত আছে ‘শ্রী বর দা’নামে এক অপরুপ সুন্দরী জমিদার কন্যা ছিল। দেখতে অপরুপ সুন্দরী এ জমিদার কন্যাকে প্রজা সাধারন ‘শ্রী বড় দিদি’বলে সম্বোধন করতো। সেই শ্রী বড় দিদি‘র সংক্ষিপ্ত রুপ ‘শ্রী-বর-দি’থেকে আজকের ‘শ্রীবরদী’। বর্তমানে উপজেলা সদরের মৌজার নাম শ্রীবরদী শম্ভুগঞ্জ আজও কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
জেলা শহর শেরপুর সদর থেকে ১৮ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে শ্রীবরদী অবস্থিত। শ্রীবরদীর দক্ষিণে শেরপুর সদর ও ইসলামপুর উপজেলা, পূর্বে শেরপুর সদর, পশ্চিমে বকসীগঞ্জ উপজেলা ও উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্য অবস্থিত। শ্রীবরদী উপজেলা সদর ২৫.১৪৬৪১৩এন৮৯.৯৩২০৬৮ই ডিগ্রি স্থানাঙ্কে অবস্থিত।
শ্রীবরদী উপজেলার যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম হচ্ছে সড়ক পথ। উপজেলা সড়ক ১২টি। আয়তন ৮৮.২৩ কিলোমিটার। ইউনিয়ন সড়ক ১৪ টি। মোট দৈর্ঘ্য ৭০.৯৫ কিলোমিটার। গ্রামীন রাস্তা এ ক্যাটাগরীর ৪৪টি। যার দৈঘ্য ১৬৫.৬১ কিলোমিটার আর বি ক্যাটাগরির ১৪২.২৯ কিলোমিটারের ৭১ টি সড়ক রয়েছে।
উপজেলার মোট জনসংখ্যার ৩২% ভূমিহীন, ২৭% মধ্যম, ১৩% ধনী এবং ২৮% ছোট ভূমিহীন। মাথাপ্রতি আবাদি জমি ০.১৩ হেক্টর।
শ্রীবরদী উপজেলার কুটির শিল্পের ইতিহাস বেশ সমৃদ্ধ। এ এলাকার বাঁশশিল্প এলাকার চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্যস্থানে রপ্তানি হচ্ছে। নকশীকাঁথা তৈরী করে গ্রামীণ অনেক মহিলা সংসারের আয়বর্ধন করছে। একসময় সরকারি উদ্যেগে রাণীশিমুল ইউনিয়নের ভায়াডাঙ্গা বাজারে কুটির শিল্পপল্লী গড়ে উঠেছিল। এখানকার আদিবাসী পরিবারগুলোর তৈরী বিভিন্ন বাঁশশিল্প ও বুননকরা বিভিন্ন পোষাক সত্যিই নজরকারা। সমাদর রয়েছে এখানকার কামার ও কুমার শিল্পীদের তৈরী তৈজসপত্রের। অধিবাসীদের মধ্যে বাঁশ শিল্পের সঙ্গে জড়িত রয়েছে ২৭০ পরিবার, স্বর্ণাকার ২২ জন, কামার ৫৫ জন, কুমার ৩৫ জন, কাঠের কাজ ১৩৯ টি পরিবার এবং ২৭৫ টি পরিবার সেলাইয়ের কাজে জড়িত।
দুঃসাহসীক সম্মুখযুদ্ধ ছাড়াও মুক্তিযোদ্ধে শ্রীবরদী উপজেলার ইতিহাস গৌরবময়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষনের পরই এ এলাকার মুক্তিকামী জনগণ সংগঠিত হতে থাকে। ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসের শেষের দিকে স্থানীয় শ্রীবরদী এপিপিআই মাঠে আনছার ও মুজাহিদ বাহিনীর সহায়তায় ছাত্র, যুবকরা যুদ্ধের প্রস্তুতি স্বরুপ রাইফেল প্রশিক্ষণ শুরু করে। স্থানীয় সংগ্রাম কমিটি সার্বিক ব্যাবস্থাপনায় ছিলেন মুজাহিদ কমান্ডার রহুল আমিন ও আনছার কমান্ডার আওয়ামীলীগ নেতা জমির উদ্দিন সরকার।
মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে এ অঞ্চলটি ১১ নং সেক্টরের অধীনে ছিল। মুক্তযুদ্ধকালীন ১১ নং সেক্টরের রক্তাক্ত রণাঙ্গণ ধানুয়া-কামালপুর শ্রীবরদী উপজেলার অধিন ছিল। পাক বাহিনীর মেজর আইয়ূব এ অঞ্চলে মুক্তিবাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে মৃত্যুবরণ করেন। এ অঞ্চলের সীমান্তবর্তী পাহাড়ি অঞ্চল সবসময় মুক্ত ছিল।
১৯৭১ সালে ৬ই ডিসেম্বর সকাল ১০ টায় শ্রীবরদী অঞ্চল মুক্ত হয়। উপজেলায় মোট মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ৫১০ জন। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ২৪ জন।
স্বাধীনতাযুদ্ধে অসামন্য অবদানের জন্য এ জেলায় ৩ জন জাতীয় বীর আছেন তারা শ্রীবরদী উপজেলারই কৃতি সন্তান। তারা হলেন- কাকিলাকুড়া ইউনিয়নের মলামারী গ্রামের শহীদ শাহ মুতাসিম বিল্লাহ খুররম (মরণোত্তর বীর বিক্রম), একই গ্রামের ডাঃ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ খসরু ও খামরিয়াপাড়া গ্রামের কমান্ডার মোঃ জহুরুল হক মুন্সী বীর প্রতীক (বার)।
মুক্তিযুদ্ধের স্বৃতি আজও বহন করছে শ্রীবরদী থানার পূর্ব পাশে টাঙ্গাইলের মুক্তিযোদ্ধার জোড়া কবর ও রাণীশিমুল ইউনিয়নের বালীজুরি সংলগ্ন রাঙ্গাজান নামক স্থান। এছাড়াও শ্রীবরদী উপজেলার কৃতি সন্তান তদানীন্তর এমপি এড. আঃ হালিম মুক্তিযুদ্ধকালীন এ এলাকায় একজন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসাবে কাজ করেন।
সুমেশ্বরী-শ্রীবরদীর উত্তর সীমান্তের মেঘালয় রাজ্যের পুরাখাসিয়া থেকে উৎপন্ন পাহাড়ি নদী সুমেশ্বরীর। নদীটি উপজেলার রানীশিমুল ইউনিয়নের খাড়ামোড়া-রাঙ্গাজান গ্রামের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ঝিনাইগাতি উপজেলা হয়ে ব্রক্ষপুত্রে মিলিত হয়েছে। পাহাড়ি অঞ্চলে খাবার পানি ও চাষাবাদের একমাত্র অবলম্বন নদীটি খর¯্রােতা হওয়ায় এলাকায় পাগলা নদী নামে পরিচিত।
ঢেউফা-ঢেউফা নদীর উৎপত্তি ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পুরাখাসিয়া অঞ্চলের পাহাড় থেকে । নদীটি সিংগাবরুনা ইউনিয়নের হারিয়াকোনা- বাবেলাকোনা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে রাজা পাহাড়ের নিচ দিয়ে প্রবাহিত। এ অঞ্চলে পাহাড়ি নদীকে ঝোড়া বলা হয়। সে থেকে এ নদী কর্ণঝোড়া নামেও পরিচিত। আর এ নদীর তীরে গড়ে উঠা জনবসতিপূর্ণ এলাকার নামকরণও করা হয় কর্ণঝোড়া ।
শ্রীবরদী উপজেলা বভিন্নি প্রাকৃতকি সম্পদে সমৃদ্ধশালী। শ্রীবরদীর পাহাড়ী অঞ্চলে অত্যন্ত মূল্যবান খনজি পাথর, সাদা মাটি , নূড়ি ও সলিকিা বালি রয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদশে ভূ-তত্ব জরপি দপ্তর (জএিসব)ি এক জরপি চালয়িে এখানে র্পযাপ্ত পরমিানে সাদা মাটরি মজুদ পেয়েছে।যার দর্ঘ্যৈ ২ কলিোমটিার এবং প্রস্থ ২ মটিার লন্সে আকারে ছড়ানো। মজুদরে পরমিান প্রায় ১৩ হাজার টনরে মতো। এ মাটি সাধারনত দখেতে হালকা ধূসর র্বনরে, কছিুটা হালকা বাদাম-ি সাদা র্বনরে। এতে এ্যালোমনিয়িাম (হ-ি২.৩) পরমিান শতকরা ২০ ভাগ থকেে ৩০ভাগ।
উপজেলার অধিকাংশ লোক কৃষি নির্ভর। অধিবাসীদের ৪৬.৩৫% কৃষি, ১.৯৬% মৎস্য, ২১.৬% কৃষি শ্রমিক, ৯.৬৮% ব্যবসা- বাণিজ্য, ৩% সেবা, ২.৯৮% অকৃষি শ্রমিক ও ১৪.৪৩% অন্যান্য পেশাজীবী।
ঐতিহাসিকস্থানও দর্শনীয় স্থান:
গড়জরপিা বার দুয়ারী মসজদি
স্থাপত্যনর্দিশনরে অন্যতম গড় জরপিা বার দুয়ারী মসজদি । এটি এ অঞ্চলরে ঐতহ্যি । জনশ্রুততিে আনুমানকি ৭-৮ শত বৎসর র্পূবে জরপি শাহ নামক এক মুসলমি শাসক কতৃক নর্মিতি হয়ছেলি এই মসজদিট।ি তবে এটি র্বতমানে পুন নর্মিান করা হয়ছে।ে আসল মসজদিটি ভূ র্গভইে রয়ে গছে।ে তার উপরইে স্থাপতি হয়ছেে র্বতমান মসজদিট।ি
শ্রীবরদী উপজেলা থেকে দক্ষিণপূর্ব দিকে ১২ কি: মি দূরে বারদুয়ারী মসজিদ অবস্থিত। মসজিদটিতে ১২ টি দরজা, ৩টি জানালা ও ৩টি গম্বুজ রয়েছে। মসজিদটির পূর্বপার্শ্বে ৯টি দরজা এবং উত্তর পার্শ্বে ২টি দরজা ও ১টি জানালা আছে।
কথিত আছে, মসজিদটি বর্তমানে যে অবস্থানে আছে মোগল আমলে উক্ত স্থানে মসজিদটি সেনা ক্যাম্পের মসজিদ ছিল। কালের বিবর্তনে ভূমিকম্পে মসজিদটি ধসে যায় এবং মাটির নিচে তলিয়ে যায়। মসজিদের উপর গড়ে উঠে মাটির স্তুপ আর মাটির স্তুপের টিলার উপর বিভিন্ন প্রকার গাছও গজায়। দীর্ঘদিন স্থানীয় লোকজন জায়গাটিকে মসজিদ আড়া (জঙ্গল) বলেই জানতো।
কালক্রমে জামালপুর জেলার সদর উপজলোর ততিপলস্না ইউনয়িনরে পঙ্গিলহাটী(কুতুবনগর) গ্রামরে (ব্রাহ্মণ ঝি বলিরে উত্তর পাড়)ে জনকৈ পীর আজজিুল হক সাহেব শ্রীবরদী উপজেলায় পিএলএ পদে চাকুরী করতেন। আজিজুল হক সাহেব ছিলেন পীর ভক্ত। তিনি তৎকালীন শর্ষিনা পীরের মুরিদ ছিলেন। সেই সূত্রে তিনি এ এলাকায় তার পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পান। তিনি একদিন স্বপ্নে গড়জরিপা মসজিদের কথা জানতে পারেন। পরের দিন তিনি গড়জরিপা যান এবং উচু টিবি (উঁচু ভূমি) খুঁজতে থাকেন। গ্রামের প্রবীন লোকদের মাধ্যমে জানতে পারেন যে, গাছ পালায় ভরা ঐ উচু ভূমির উপর এককালে মসজিদ ছিল। তিনি এলাকার লোকদের কাছে তার স্বপ্নের কথা বর্ণনা করেন এবং মুরীদদের নিয়ে মাটি গর্ত করতে থাকেন। গাছপালা পরিস্কার পূর্বক মাটি গর্ত করার কয়েকগজ নীচে বর্তমান আকৃতির মসজিদের মত একটি মসজিদ দেখতে পান। সেই পুরাতন মসজিদের ইটগুলো চারকোণাওয়ালা গোলাপফুল মার্কা ছিল। স্থানীয় লোকজন সেই ইটগুলো সংরক্ষণ করলেও ১৯৬৩ সালে প্রতœতাত্বিক বিভাগ ইটগুলো নিয়ে যায়। মসজদিটরি ইটরে ধরণ কৌশলে খান বাড়ী মসজদিরে ইটরে সাথে যথষ্ঠে মলি লক্ষ্য করা যায় । প্রাচীন রীতরি সাথে আধুনকি রীতরি সংমশ্রিণে মসজদিটি নর্মিতি হয়ছেে যা সহজইে র্দশকদরে মন জয় কর।ে অপরূপ সুন্দর এই মসজদিটি আসলে পুরার্কীতরি নর্দিশন । ১২টি দরজা থাকায় এর নাম করণ করা হয় বার দুয়ারী মসজদি। র্পূবওে তাই ছলি। অর্পূব কারুকাজ সমবলতি মহেরাব ও র্কাণশি গুলো সকলরে দৃষ্টি কাড়।ে
বর্তমানে বিশেষকরে শুক্রবারে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শিরনী, টাকা-পয়সা মানত করে অনেক লোকজন মসজিদে আসেন।
জরিপ শাহের মাজার:
হযরত শাহজালাল ইয়ামেনী (রহ:) যে সময়ে ধর্ম প্রচারের জন্য পাক-ভারত উপমহাদেশে আগমন করেন তার সঙ্গে যে ৩১৩ জন সফরসঙ্গী ছিলেন তার অন্যতম একজন হলেন হযরত জরিপ শাহ (রহ)। তিনি বাংলার এ উত্তর সীমান্তে ধর্ম প্রচারের দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে এ এলাকায় অবস্থান করেন। অত্যন্ত সুচতুর এ ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিত্ব তাঁর খানকাকে বহি: শত্রুর হাত থেকে নিরাপত্তার জন্য ৩৬০ একর জমির উপর চারিপাশে একটি খাল খনন করেন। এলাকায় প্রচলিত আছে জ্বীনদের মাধ্যমে তিনি একরাতে খালটি খনন করেন। বর্তমানে খালের পশ্চিমপাড়ের উচ্চতা ১৫ থেকে ২০ হাত। এ সূত্র ধরেই এ বুজুর্গ ব্যক্তিত্বের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অত্র এলাকার নাম গড়জরিপা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। পুরো খানকা শরীফ নির্মার্ণের পূর্বেই তিনি ইন্তেকাল করেন। তার মৃত্যুর পর খানকা শরীফের পাশেই তাঁকে দাফন করা হয় যা জরিপ শাহের মাজার হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছে। এ মাজারের পাশে রয়েছে বিশাল আকৃতির একটি পাথর। জনশ্রুতি রয়েছে কোন রুগ্ন ব্যক্তিকে এ পাথরের উপর গোসল করালে তিনি রোগমুক্তি লাভ করেন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অনেকে রোগমুক্তির আশায় ছুটে আসে এ মাজারে।
কালিদহ সাগর:
হযরত জরিপ শাহ (রহ:) তাঁর খানকার চারপাশে যে খাল খনন করেছিলেন ঐ খালটিই বর্তমানে কালিদহ সাগর নামে পরিচিত। সাগর নয় কিন্তু খালটির বিশালতায় এটি বর্তমানে কালিদহ সাগর নামে পরিচিত। খালটি আজ থেকে ৫০০/৬০০ বছর আগে খনন করা হয়েছিল বলে অনেকের ধারনা। কালিদহ সাগরের মাঝখানে ডিঙ্গা আকৃতির মাটির রুপ রয়েছে। যা বেহুলা লক্ষিন্দরের ডিঙ্গা নামে পরিচিত। জনশ্রুতি রয়েছে, চাঁদ সওদাগরের নৌকা এ কালিদহ সাগরে ডুবেছিল। কালিদহ সাগরের ডিঙ্গাটির একটি বিশেষ বৈশিষ্ঠ হলো শীত বা ভরা বর্ষার সময়ও ঐ ডিঙ্গার ১/২ ফুট পানির উপরে ভাসমান থাকে। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো ১৯৮৮ সালের প্রলয়ংকরী বন্যায় যখন সারা দেশের অধিকাংশ এলাকা পানির নীচে ছিল তখনও ঐ ডিঙ্গার উপরে পানি উঠেনি। পানি থেকে ডিঙ্গার উচ্চতা ঐ ২ ফুটই ছিল। এটাই হলো কালিদহ সাগরের বিশেষত্ব। বর্তমানে কালিদহ সাগরে প্রতিবছর প্রচুর সনাতন ধর্মাবলম্বী বারুণী উপলক্ষে পূণ্য¯œানে অংশ নেয়।
কাদির পীর সাহেবের মাজার:
আজ থেকে প্রায় ২০০বছর আগে আরব আমীরাতের ইয়ামান রাজ্য থেকে ১২ জন আউলিয়া বেদ্বীন লোকদের মাঝে ইসলামের আলো দেয়ার উদ্দেশ্যে এ দেশে এসেছিলেন তাদের ১ জন ছিলেন হযরত কাদির পীর (রহ:) সাহেব। অন্য ১১ জন ভারত বর্ষের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েন বলে জানা যায়। বর্তমানে দরগার নামে মোট জমির পরিমাণ ৫ একর ২০ শতাংশ।
বর্তমানে মাজারের পূর্বপাশে আনুমানিক ৫০ বছর পূর্বে গোলাকার পুরাতন বিল্ডিং ছিল যার একটি মাত্র দরজা ছিল। এ এলাকায় তৎকালে হিন্দু লোকের বসবাস বেশি ছিল আর মুসলমানের সংখ্যা ছিল খুবই কম। পরবর্তীতে মুসলমানের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। প্রয়োজনের তাগিদে নামায পড়ার জন্য জুম্মাঘর বা মসজিদের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। তখন ঐ গোলাকার ঘরটি ভেংগে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ব্যবস্থাসহ জুম‘আ’র নামাযও পড়া হয়। আর এটিই কাদির পীর দরগাহ মসজিদ নামে বর্তমানে পরিচিতি লাভ করেছে। মুসরমানদের সংখ্যা বাড়ার সাথে নামাজীর সংখ্যাও বাড়ছে আর নামাজির সংখ্যা বাড়ায় ২০০৪ সালে ছোট মসজিটটি ভেঙ্গে ৮০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ৪০ ফুট প্রস্থের একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে।
মসজিদের উত্তরে রয়েছে একটি কূপ, অদূরে রয়েছে ৩ একর জমির উপর একটি দীঘি। কথিত আছে, কেউ মানত করে ছিন্নি রান্না করতে চাইলে পুকুরের পাড়ে এসে তার মনোবাসনা বলতে হতো আর দীঘির মাঝ থেকে পানির উপরে ভেসে আসত ডেকচি (রান্না করার বড় পাত্র)। ঐ ডেকচিতে ছিন্নি রান্না করে গরীবদের মাঝে বিতরণের পর আবার ডেকচিটি পরিস্কার করে পুকুরে রাখলেই চলে যেত পানির নিচে। কালের ধারায় কোন একজন ডেকচিতে রান্না করার পর পরিস্কার না করেই পুকুরে রেখে আসে। তারপর থেকেই আর ডেকচিটির দেখা মিলে না।
তাঁর স্বৃতিকে ধরে রাখার জন্য ঘোনাপাড়া, ঘোড়জান, চৈতাজানী, কারারপাড়ার অমৃতা, গড়জরিপা সহ আরও কিছু এলাকার মুরব্বীগণ ইসলামী শিক্ষার প্রসারে একটি মাদরাসা গড়ে তোলেন যা ঘোনা পাড়া কাদির পীর সুন্নতিয়া মাদ্রাসা নামে পরিচিত লাভ করেছে।
এছাড়াও উপজেলার ফতেহপুর গ্রামে হযরত শাহ ফতেহ মাহমুদ (রহ:) মাজার ও তার নামানুসারে মাদরাসা, তাতিহাটি ইউনিয়নে চককাউরিয়া গ্রামে হযরত বশর উদ্দিন (রহ:) ওরফে বড় হুজুর সাহেবের মাজার রয়েছে।
রাজা পাহাড়:
ময়মনসিংহের সবচেয়ে বড় মালভূমি ‘রাজা পাহাড়’শ্রীবরদী উপজেলার উত্তর সীমান্তে অবস্থিত। উপজেলা সদর থেকে রাজা পাহাড়ের দুরত্ব ১৪ কিলোমিটার। সৌন্দর্য ও ঐতিহাসিক দিক থেকে রাজা পাহাড়ের গুরুত্ব অত্যধিক। প্রাচীন ভারতবর্ষের কামরুপ কামাক্ষা অঞ্চল দীর্ঘসময় এ রাজা পাহাড় থেকে পরিচালিত হয়েছে বলে জনশ্রুতি রয়েছে। ব্রিটিশ বিরোধী গারো বিদ্রোহ রাজা পাহাড়ের দূর্গ থেকে পরিচালিত হয়েছে। স্বাধীনতা সংগ্রামে মুক্তিবাহিনী এ পাহাড়কে দূর্গ হিসাবে ব্যবহার করে। মুক্তিযোদ্ধারা এ অঞ্চলের অধিকাংশ যুদ্ধ এ পাহাড় থেকেই অংশগ্রহণ করে। কথিত আছে, পাগলা দারোগা নামে একজন পুলিশ কর্মকর্তা সারাক্ষণ পাগড়ি পড়েই থাকতেন । তিনি শ্রীবরদী এলাকায় এসে অত্র জায়গাটি পছন্দ করেন আর তার জীবদ্দশায় তিনি বিভিন্ন ধরনের গাছ গাছালি লাগিয়ে বাগান বাড়ি গড়ে তুলেন। বর্তমানে এ রাজার পাহাড়টি পাগলা দারোগার রেখে যাওয়া কীর্তির স্বাক্ষ্য বহন করে। তিনি মারা যাওয়ার পূর্বে অনেক দিন মাটির গর্ত তৈরী করে কবরের আকৃতি বানিয়ে দিন রাত তাতে শুয়ে থেকে আল্লাহর ধ্যান করতেন। আশ্চর্য্যরে বিষয় হলো তিনি তার গড়া এ বাগান বাড়িতে মৃত্যু বরণ করেননি। বর্তমানে তার বংশধররা এ পাহাড়ে বসবাস করছে। সে থেকে দীর্ঘ ও সূউচ্চ পাহাড়ের উপর বিশাল সমতলভূমি রাজা পাহাড় এলাকায় পাগলা দারোগার পাহাড় নামেও পরিচিত। এখনও পাহাড়ের টিলা খুড়লে প্রাচীণ আমলের ইট সুড়কি বেড়িয়ে আসে।
কর্ণঝোড়া রাবার বাগান:
আশির দশকে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশে হাতে গোনা যে কয়েকটি রাবার শিল্প ও উৎপাদন কারখানা স্থাপিত হয় তাদের মধ্যে কর্ণঝোড়া রাবার বাগান অন্যতম। ৮০০ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত এ রাবার বাগানটি এলাকার পর্যটন শিল্পের অন্যতম।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস