শ্রীবরদী উপজেলার ভারতীয় সীমান্তবর্তী সিংগাবরুনা ইউনিয়নে রাজা পাহাড় অবস্থিত।
দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে বাসে বা যে কোনো যানবাহনে আসা যায় শেরপুর শহরে। এখান থেকে মাত্র ৩৪ কিলোমিটার দূরে শ্রীবরদীর কর্ণঝোরা বাজার। বাস, টেম্পুসহ যে কোনো যানবাহনে আসা যায় মনোমুগ্ধকর নয়ানিভিরাম স্থান রাজার পাহাড় থেকে বাবেলাকোনায়। পাশেই রয়েছে অবসর কেন্দ্র। রাত হলে সেখানে থাকার জন্য রয়েছে নিরাপত্তাবেষ্টিত আবাসিক ভবন। কম খরচে ,কম সময়ে এ গারো পাহাড় আপনাকে দেবে অনাবিল আনন্দ।
উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়, শ্রীবরদী, শেরপুর।
চেয়ারম্যান, সিংগাবরুনা ইউনিয়ন পরিষদ, শ্রীবরদী, শেরপুর।
ছোট নদী ঢেউফা। এ নদীর শান্ত শীতল জলের স্রোতধারা এক টানা বয়ে চলেছে। সহজ সরল এ নদীর বুকে জেগে উঠা চরের বালু চকচক করছে। এর পাশেই বিশাল উঁচু টিলা রাজার পাহাড়। নদী আর সৌন্দর্যের অপরুপ লীলাভূমি রাজার পাহাড় যেন ঐশ্বরিক স্বপ্নপুরি। এর কূল ঘেঁষে নানা কারুকার্যে সাজানো উপজাতি এলাকা বাবেলাকোনা। এ গ্রাম যেন যোগ করেছে সৌন্দর্যের নতুন মাত্রা। ঢেউফা নদীর দু’পাশে সবুজ বৃক্ষ আচ্ছাদিত অসংখ্য উঁচু-নিচু পাহাড়। গভীর মমতা আর ভালবাসায় গড়া উপজাতিদের বর্ণিল জীবনধারা। অপূর্ব সুন্দর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মিলিত আহ্বান।
সৌন্দর্যময়ী এ স্থানটি শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ের মেঘালয়ের পাদদেশে ,অবারিত সবুজের যেন মহা সমারোহ। গারো পাহাড় কত যে মনোমুগ্ধকর না দেখলে হয়ত বিশ্বাস হবেনা। যারা একবার দেখেছেন তারাই অনুভব করতে পেরেছেন।
কিংবদন্তি রয়েছে, প্রচীনকালে এক রাজার বাসস্থান ছিল এখানে। সে অনুসারে এ পাহাড়ের নাম হয় রাজার পাহাড়। কিন্তু এ পাহাড়ের আগের সৌন্দর্য এখন আর নেই। তবে এর বৈশিষ্ট প্রতিবেশী পাহাড়গুলো রয়ে গিয়েছে। গারো পাহাড়ে যতগুলো পাহাড় রয়েছে তার মধ্যে এটির উচ্চতা সবচেয়ে বেশি। এ পাহাড়ের চূড়ায় শতাধিক হেক্টর জমির সমতল বিরান ভূমি। এখান থেকে মেঘালয় যেন আরো কাছে মনে হয়। এর চূড়া সবুজ আর নীলের সংমিশ্রণে যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। যেন আকাশ ছোঁয়া বিশাল পাহাড়ের নৈসর্গিক দৃশ্য। এটি মনকে করে আবেগতাড়িত।
রাজার পাহাড় ঘেঁষা জনপদ বাবেলাকোনা। এখানে অসংখ্য উঁচু-নিচু টিলায় ঘেরা এক অন্যবদ্য গ্রাম। প্রাচীনকাল থেকে এখানে গড়ে ওঠেছে জনবসতি। ঝোপ-জঙ্গলে আবৃত্ত গ্রামটি কালের আবর্তে পরিবর্তিত। প্রাকৃতিক শোভামন্ডিত সবার কাছে পরিচিত রাজার পাহাড় থেকে বাবেলাকোনা।
বাবেলাকোনায় গারো, হাজং, কোচ অধ্যুষিত উপজাতিদের সংস্কৃতি ভিন্ন মাত্রায় বৈচিত্র্যপূর্ণ জীবনধারা। যেন প্রাকৃতিক বিরুপতা। এ যেন জঙ্গল আর জন্তু-জানোয়ারের নৈসর্গিক মিতালি। জনপদটির চলমান জীবন সংগ্রামের বিরল দৃশ্য। উপজাতিদের সংস্কৃতি সংরক্ষণ ও চর্চার কেন্দ্রগুলোও যেন আলাদা আকর্ষণ। এসব হচ্ছে বাবেলাকেনা কালচারাল একাডেমি, ট্রাইবাল ওয়েল ফেয়ার এসোসিয়েশন অফিস (টিডব্লিও), জাদুঘর, লাইব্রেরি, গবেষণা বিভাগ, মিলনায়তন এর অন্যতম নিদর্শন। এখান থেকে উপজাতিদের সম্পর্কে অনেক কিছুই জানা যায়। মিশনারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় হচ্ছে এখানকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
বর্ষাকালে ঢেউফা নদীর জোয়ারে কানায় কানায় ভরে উঠে। কিন্তু দিনের শেষে ভাটা পড়ে। শুকিয়ে যায় এ নদীর পানি। তবে খরস্রোতা এ নদীর পানির গতি কখনোই কমেনা। সারা বছরই হেঁটে পার হওয়া যায়। ক’বছর ধরে এ নদীর দু’পাশে দুটি ব্রীজ নির্মিত হওয়ায় এখন আর নদীতে নামতে হয়না। এর বুক জুড়ে বিশাল বালুচর যা নির্মাণ কাজে ব্যবহারের জন্য শহরে নিয়ে যাচ্ছে। এ যেন রাজার পাহাড় থেকে বাবেলাকোনা কুল ঘেষাঁ বিকল্প সমুদ্র সৈকত।
বাবেলাকোনার উপজাতিদের কারুকার্য মন্ডিত ধর্মীয় গীর্জা, মন্দিরসহ অসংখ্য প্রাকৃতিক নিদর্শনের সমাহার। উপজাতিদের চালচলন, কথাবার্তা ও জীবনপ্রণালী দর্শনার্থীদের অাকৃষ্ট করে। তাদের সংস্কৃতিতে রয়েছে ভিন্নতা। ওদের জীবন যেন প্রবাহিত হয় ভিন্ন ধারায়। এখানে রয়েছে ওয়ার্ল্ড ভিশন, বিট অফিস, বিজিবি ক্যাম্প এবং রাবার বাগান।
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS